শীতকালের সেরা কয়েকটি সবজি ও তার পুষ্টি গুণ
ভমিকা : শীতকাল মানেই টাটকা সবজির কাল। অনেক অপেক্ষার পর আসে শীতকাল। আর সারা বছরের মধ্যে শীতকালে বেশি সবজি উৎপাদন হয়ে থাকে। শীতকালকে বলা হয়ে থাকে সেরা সবজির একটি কাল। এ সময় বাংলাদেশে প্রচুর পরিমাণে শাক-সবজি উৎপাদন হয়ে থাকে। আর শীতের মৌসুমে অনেক নতুন সবজি উৎপাদন হয়ে থাকে, যা অন্য সব মৌসুমে হয় না। তাই শীতকালকে টাটকা সবজির কাল বলা হয়ে থাকে। আপনি যদি গ্রামে থাকেন তাহলে দেখবেন, শীতের সকালে কুয়াশার একটি প্রলেপ সবজির ওপর পড়ে থাকে। আর মনে হয় যেন নতুন করে সবজি কুয়াশার সাজে সাজচ্ছে। এবারে জেনে নিয় শীতকালের সেরা কয়েকটি সবজি।
শীতকালের সেরা কয়েক টি সবজি ও তার পুষ্টি গুণ |
সূচিপত্র :
১. গাজর
২. টমেটো
৩. বাঁধাকপি
৪. ফুলকপি
৫. ব্রকলি
৬. শিম
৭. মুলা
৮. লাউ
৯. পেয়াজ কলি
১০. ধনেপাতা
১. গাজর
আমরা সবাই জানি যে গাজর একটি শীতকালীন সবজি। কিন্তু এখন প্রায় সারা বছরই বাজারে পাওয়া যায়। এটি একটি পুষ্টি গুণ সম্পন্ন সবজি। আর গাজরে প্রচুর ক্যারোটিন আছে। গাজর একটি কাঁচা সবজি। গাজরে ভিটামিন সি সহ বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে।রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ত্বক উজ্জ্বলতা বাড়ায়, দাঁতের শক্তি ক্ষমতা বাড়ায়,যৌন শক্তি বাড়ায়,হাড় মজবুত করে।
২. টমেটো
টমেটো শীতের ফল হলেও এখন সারা বছরই পাওয়া যায়। তবে শীতের সময় এই সবজির স্বাদ অন্য সময়ের চেয়ে আলাদা।
সালাদ হিসেবে ও রান্না টমেটো খুবই সুস্বাদু। টমেটোতে ভিটামিন এ কে, বি১, বি৩, বি৫, বি৬, বি৭ ও ভিটামিন সিসহ নানা প্রাকৃতিক ভিটামিন পাওয়া যায়।
এ ছাড়া এতে ফোলেট, আয়রন, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ক্রোমিয়াম, কোলিন, কপার এবং ফসফরাসের মতো খনিজও থাকে। টমেটো খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, রক্তশূন্যতা দূর করে, এতে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন থাকে, ত্বকের ক্লিনজার হিসেবে কাজ করে, রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে।
৩. বাঁধাকপি
বাঁধাকপি একটি শীতকালীন সবজি। এখন, গ্রীষ্মকাল, বর্ষাকাল, ও শীতকালে উৎপাদন হয়ে থাকে। বাঁধাকপিতে ভিটামিন সি প্রচুর পরিমাণে থাকে। বাঁধাকপিতে উপস্থিত ফোটোনিউট্রিয়েন্টস, যেমন পলিফেনল এবং গ্লকোসিনোলেট শরীরের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং এন্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদানের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় যা করনারি আর্টারি ডিজিজ, অর্থাৎ হার্ট এর রোগের প্রকোপ কমানোর পাশাপাশি ক্যান্সার, অ্যালঝাইমারস এবং ম্যাকিউলার ডিজেনারেশনের মতো রোগকে দূরে রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
৪. ফুলকপি
ফুলকপি একটি শীতকালীন সবজি। কিন্তু এখন প্রায় সারা বছরই বাজারে পাওয়া যায়। ফুলকপি পানি ও ফাইবারের ভালো উৎস।
ফুলকপিতে এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট ক্যানসারের বিরুদ্ধে কার্যকর ভূমিকা রাখে। ফুলকপির একটি গ্রুপ রয়েছে, যা গ্লুকোসিনোলেটস নামে পরিচিত। যখন এটি চিবানো হয় এবং হজম হয়, তখন এই পদার্থগুলো এমন যৌগে বিভক্ত হয়ে যায়, যা ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে—এগুলো কোষকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করে এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি, অ্যান্টিভাইরাল এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল প্রভাবও রয়েছে। স্মৃতিশক্তি বাড়ায়, হাড় মজবুদত করে, কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেম উন্নত করে।
৫. ব্রকলি
ব্রকলি শীতকালীন একটি সবজি। ব্রকলি বা ব্রোকোলি ক্রসিফেরী গোত্রের অন্তর্ভুক্ত শীতকালীন সবজি। এতে ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ফোলেট, আঁশ আছে। এতে Phytonutrients থাকায় হৃদরোগ, বহুমূত্র এবং ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। ব্রকলি জারণরোধী (antioxident) ভিটামিন এ এবং সি সরবরাহ করে কোষের ক্ষতি রোধ করে। সাধারণত তিন ধরনের ব্রোকোলি বেশি দেখা যায়।[৩]। ব্রকলিতে আছে উচ্চমাত্রার গ্লুকোরাফানিন। হজমের সময় যা সালফোরাফেন নামের শক্তিশালী অ্যান্টি–অক্সিডেন্টে রূপান্তরিত। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, এই সালফোরাফেন শরীরে ফ্রি র্যাডিকেলের ফলে হওয়া অক্সিডেটিভ স্ট্রেস, ব্লাড সুগার, কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নয়ন, হৃৎস্বাস্হ্য সুরক্ষিত থাকে, রোগ প্রতিরোধ, ক্ষমতা বাড়ায়,দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়, ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।৬. শিম
শিম একটি শীতকালীন সবজি। শিম সাধারণত ২ রং এর হয়ে থাকে,একটা সবুজ রঙের,আরেকটা বেগুনি রঙের। শিমের গুঁটিতে ক্যালসিয়াম থাকে,ফসফরাস থাকে,প্রোটিন ও ভিটামিন -সি সমৃদ্ধ একটি সবজি। শিম পরিপাকের জন্য ভালো। তাছাড়া শিম খেলে দেহ ঠান্ডা থাকে। শিম খেলে বাতের ব্যথার উপকারী খাবার। তাছাড়া, শিম খেলে খিদে বাড়ায় ও মুখের স্বাদ বাড়িয়ে তোলে। এছাড়াও নানা রকম পুষ্টি গুণ আছে শিমের ভিতরে।
৭. মুলা
শীতকালের সবজির তালিকায় প্রথম দিকেই রয়েছে মুলা। তবে ঝাঝালো বন্ধের কারণে মুলা অনেকের কাছেই অপ্রিয়। তবে অন্যান্য সবজির মত মূল্যায় স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী। এতে ফোলেট,ফাইবার, রাইবোফ্ল্যাবেন,পটাশিয়াম, ভিটামিন বি৬,ম্যাগনেশিয়াম,ম্যাঙ্গানিজ ও ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ একটা সবজি। মুলা শরীরে লোহিত রক্ত কণিকা সংশ্লেষণে সাহায্য করে।এর ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এতে থাকা ক্যালসিয়াম হাড়ের শক্তি পাশাপাশি উচ্চ রক্তচাপ কমায়। বদহজম, এসিডিটি ও কোষ্ঠকাঠিন্যর লাইটটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সবজি।
৮. লাউ
লাউ একটি শীতকালীন সবজি। কিন্তু প্রায় সারা বছরই লাউ পাওয়া যায়। লাউ একটি জনপ্রিয় সবজি। এইসব দেখেতে অনেক সুস্বাদু হয়ে থাকে ও পুষ্টিকর। লাউ সবজিতে প্রচুর পরিমাণে পানির চাহিদা পুরণ করে থাকে। লাউ গরমের সময় শরীরের অনেক পানির চাহিদা পুরণ করে থাকে। লাউয়ে রয়েছে, কার্বোহাইড্রেট,প্রোটিন, ফ্যাট, ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়াম, নিকোর্টিনিক অ্যাসিড এছাড়া ও রয়েছে খনিজ লবণ, ভিটামিন বি -১,বি২ আয়রণ সহ নানা রকম উপাদান রয়েছে লাউয়ের ভিতরে।
৯. পেঁয়াজ কলি
পেঁয়াজ কলি শীতকালীন একটি সবজি। গাঢ় সবুজ রঙের এই সবজি বেশ উপকারী। পেঁযাজ কলিতে বেদনা উপশম কারী উপাদান থাকায় এটি দ্রুত মাথা,মাংস পেশি,এবং হাড়ের ব্যাথা থেকে মুক্তি দেয়।পেঁয়াজ কলিতে প্রচুর পরিমাণে আঁশ থাকায় হজমে সহায়তা করে। এতে ক্যারোটিন থাকায় দৃষ্টি শক্তি বাড়ায়। পেঁয়াজ কলিতে ভিটামিন-এ থাকে।১০. ধনেপাতা
ধনেপাতা একটি শীতকালীন সবজি। এটা সাধারণত শীতকালে পাওয়া যায়। ধনিয়া একটি সুগন্ধি ঔষধি গাছ। ধনেপাতা খাবারের স্বাদ ও সুগন্ধ আনতে পারে। ধনেপাতা তে ভিটামিন এ সমৃদ্ধ স্মৃতিশক্তি সাহায্য করে। পাশাপাশি চোখের ব্যথা সমস্যা দূর করে থাকে। ধনেপাতায় প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন এ, সি এবং, পটাশিয়াম থাকে কি। শরীরে পুষ্টি জোগাতে ও সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে এই উপাদানগুলো। ধনেপাতায় ভিটামিন সি থাকাই ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে তাই প্রতিনিয়ত ধনেপাতা খাওয়া উচিত।
আরো বিষয়ে তথ্য জানতে আমাদের সাথেই থাকুন ( আদিলা আই.টি.)
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url